আমনাকে আটকানোর ছক
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: লুধিয়ানায় মিনার্ভা এফসি’র বিরুদ্ধে মোহন বাগানের পারফরম্যান্স মোটেই উজ্জ্বল ছিল না। প্রথম ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে ড্র করলেও প্রথমার্ধের প্রথম ৩০ মিনিট অনবদ্য প্রেসিং ফুটবল খেলেছিল। মোহন বাগানের সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী ও ক্রোমা যা দেখে বুধবার সতর্ক করেন খেলোয়াড়দের। বুধবার রিভিউ মিটিংয়ে ঠিক হয় খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চাঙ্গা করা প্রয়োজন। সেই মতো বৃহস্পতিবার প্র্যাকটিসে প্রথম থেকেই ছিলেন অর্থ সচিব। ইস্ট বেঙ্গল শিবিরে যখন ফুটবলারদের মুখ কার্যত বন্ধ, তখন শীর্ষ কর্তাদের হস্তক্ষেপে মিডিয়ার সামনে বড় ম্যাচের আগে পালা করে আসবেন মোহন বাগানের তারকা ফুটবলাররা। অনুশীলনের শেষে এদিন যেমন এলেন ক্রোমা ও ডিপান্ডা। সঙ্গে গোলরক্ষক কোচ অর্পণ দে।
ক্রোমা ও ডিপান্ডা দুই জনেই যা বললেন তাতে বড় ম্যাচে মোহন বাগান হয়তো চেনা ছকে ফিরছে। ক্রোমা ও ডিপান্ডা স্পষ্ট জানালেন, ‘লুধিয়ানায় এক স্ট্রাইকারে খেলেছে দল। কিন্তু বক্সে এক স্ট্রাইকার থাকায় সাপোর্টিংয়ে কেউ না এলে অসুবিধায় পড়তে হয়েছে আমাদের। আমরা দুই জনে স্ট্রাইকারে খেললে প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে। আমরা কোচকে এই অসুবিধার কথা বলেছি। অর্থ সচিবের সঙ্গেও খোলামেলাভাবে কথা হয়েছে। ইস্ট বেঙ্গল রক্ষণে কিছুটা খামতি আছে। সেই সুবিধাটি নিতে হবে আমাদের।’
উল্লেখ্য, গত বছর লাজংয়ে আর কলকাতা লিগে মহমেডানের ডিপান্ডা একজন ভারতীয় স্ট্রাইকারের সঙ্গে খেলেছিলেন। পাশে এক জন থাকলে ডিপান্ডা বক্সে অনেক বেশি সাবলীল থাকেন। লুধিয়ানায় ড্র হওয়া ম্যাচেও এটা দেখা গিয়েছে। তাই সঞ্জয় সেনের উপর চাপ বাড়ছে ৪-৪-২ ছকে খেলার জন্য। ডিয়েগো ফেরেইরাকে তিনি নিয়েছিলেন কাটসুমিকে ছেড়ে দিয়ে। সেটি ‘মিসফায়ার’ করেছে। কলকাতার খাবার সহ্য হচ্ছে না তাঁর। ম্যাচ ফিটও নন ফেরেইরা। তাই দলের সেরা দুই ফুটবলারের দাবি তিনি হয়তো মেনে নেবেন। শুক্রবার অনুশীলনের এটি আরও পরিস্কার হবে।
কলকাতা লিগে দেখা গিয়েছে ডেঞ্জারজোনে ডিপান্ডা চমৎকার ফ্রি-কিক নিয়েছেন। লুধিয়ানায় চারবার ডেঞ্জার জোনে ফ্রি-কিক পায় দল। চারবারই নেন সনি নর্ডি। তিন বছর আগে সনির ফ্রি-কিকে যে তীক্ষ্ণতা ছিল তা গত দেড় বছর দেখা যাচ্ছে না। তাই ডিপান্ডাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি ডেঞ্জার জোনে ফ্রি-কিক পেলে এগিয়ে যাচ্ছেন না কেন? এর জবাবে ডিকা বলেন, ‘সনির উপর আমার শ্রদ্ধা আছে। ও ভালো ফ্রিকিক নেয়। তবে কোচ বললে আমিও নিতে পারি। কোচের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয় ম্যাচের আগে। তখন বলব এই কথা।’
ইস্ট বেঙ্গল প্রথম ম্যাচে ড্র করলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আল আমনা-কাটসুমি জুটি কিন্তু ফুল ফুটিয়েছিলেন। এই দুজনের মধ্যে কে বেশি বিপজ্জনক? ক্রোমা কিন্তু প্রাক্তন মোহন বাগানী কাটসুমির থেকে আল আমনার কথাই বেশি বললেন। তিনি বলেন, ‘আল আমনাকে রুখতে পারলে আমরা ডার্বি জিততেও পারি। আল আমনাই ওদের সেরা ফুটবলার।’
সঞ্জয় সেন যে চাপে আছেন সেটা বোঝা গেল এদিন। কম্বিনেশন প্র্যাকটিসের সময়ে টিভি ক্যামেরাম্যানরা ছবি তুলতে গেলে তিনি খেপে যান। স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে তিনি মেজাজ হারান। শুক্রবার ফটোগ্রাফারদের ছবি তুলতে দেওয়া হবে না বলে হুমকিও দেন। লাল হলুদ জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচে কাটসুমির পারফরম্যান্স তাঁকে আরও চাপে ফেলে দিয়েছে। কাটসুমি গত চার বছর ধরেই মোহন বাগানে খেলার সময়ে কোনও চোটজনিত সমস্যায় ভোগেননি। তাঁকে ছেড়ে যে জাপানিকে নেওয়া হয়েছিল সেই ইউটা মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেন ১২ দিন পর। কম্বিনেশন প্র্যাকটিসের সময়ে বেশ কিছুক্ষণ খেললেন। পরে কুঁচকির কাছে আইসপ্যাক নিয়ে বসে রইলেন। তরে অর্পণ দে জানান, ‘সতর্কতার জন্যই ওই আইসপ্যাক নিয়েছে ইউটা। ওর খেলতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ও দ্রুত উন্নতি করছে। চোট কাটিয়ে উঠেছে রেনিয়র ফার্নান্ডেজ। তবে পুরানো চোটের জন্য শিলটন ডিসুজা রবিবারের ম্যাচে অনিশ্চিত। লাল হলুদের সম্পদ মাঝমাঠ। তাই ইউটার খেলা না খেলার উপর অনেকটা নির্ভর করছে ডার্বিতে মোহন বাগানের ভাগ্য। অপর্ণ দে তো স্পষ্ট বলেন, ইউটা না থাকায় লুধিয়ানায় আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম।’ এদিকে,
ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামের কোনও কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হবে না। বেলেঘাটার কর্মীসংঘ ক্লাব থেকে টিকিট বিক্রি হবে।
গোলরক্ষক নিয়ে সমস্যার ব্যাপারে অর্পণ বলেন, ‘ছোট বক্সের মধ্যে গোলরক্ষকই যে রাজা সেটা ফের ভালোভাবে বোঝানো হয়েছে শিলটন পালকে। তাঁর প্রতিবর্তী ক্রিয়া বাড়ানোর জন্যও চলছে অনুশীলন। অভিজ্ঞতার জন্যই রবিবার শিলটন ভালো খেলবে। ওদের গোলরক্ষকদের দেখলাম। এই পজিশনে আমরাই এগিয়ে।’
No comments:
Post a Comment