মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন না হলে সেটা অঘটন । সমরেশ চৌধুরী - আজকাল - Sports Gallery

Sports Gallery

খেলাধুলার সব খবর, একসাথে হাতের মুঠোয়

মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন না হলে সেটা অঘটন । সমরেশ চৌধুরী - আজকাল

Share This

ফেডারেশন কাপ ফাইনালে মোহনবাগানের সামনে বেঙ্গালুরু এফসি। আড্ডার আসরে বসলেই আলোচনাটা শুনছি। জল্পনা–‌কল্পনা কানে আসছে। বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে মোহনবাগান কি এবার ট্রফিটা ঘরে তুলে মরশুমের মধুরেণ সমাপয়েৎ করতে পারবে?‌ সত্যি এখন এমন সময় এসেছে, যখন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে ভিন রাজ্যের দল নিয়ে ভাবতে হয়।
জিতবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। আমাদের সময়ে ভিন রাজ্যের দলগুলোকে নিয়ে মাথা ঘামাত না কেউ। জেসিটি, বিএসএফ, সালগাঁওকারের মতো কয়েকটা দল মাঝে মাঝে ঝামেলায় যে ফেলত না এমন নয়, তবে ৭০ থেকে ৯০–‌এর সময়ের মধ্যে কলকাতার দলের প্রাধান্য ছিল প্রশ্নাতীত। তখন ভিন রাজ্যের দলগুলো আমাদের সঙ্গে খেলা পড়লেই কাঁপত। একটাই ওদের লক্ষ্য থাকত, সম্মান বাঁচাতে বেশি গোলে না হারা।
এমন অনেক দিন গেছে, যখন ভিন রাজ্যের দলের ফুটবলাররা আমাদের হোটেলে এসে ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলে গেছে। বলত, তোমরা থাকতে, আমরা তো আর কোনওদিন জিতব না। তাই ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলে আক্ষেপ মেটাই। আর এখন ছবিটা উল্টে গেছে। গোয়ার দলগুলো মাঝে বেশ কিছুদিন দাপট দেখাল। এখন সে জায়গাটা আবার নিয়েছে বেঙ্গালুরু। অবাক হয়ে দেখছি, আইজলের মতো একটা আনকোরা দলকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান। কাঁপছে ঠিক বলব না, তবে জিতবই এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারছে না। না–‌হলে আইজলের মাঠে গিয়ে হেরে আই লিগটা কেন খোয়াবে মোহনবাগান।
তবে এরপরও একটা কথা বলতেই হবে, বেঙ্গালুরু এফসি গত চার বছরে যতই দুবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হোক, আর একবার ফেডারেশন কাপ জিতুক, মোহনবাগানের সঙ্গে ওরা সুবিধা করতে পারেনি। এই মোহনবাগান জুজুটাই কটকে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে ওদের পিছিয়ে রাখবে। সঞ্জয় কোচের দায়িত্বে আসার পর থেকেই দেখছি, বেঙ্গালুরুকে সামনে পেলেই বাগান ফুটবলাররা বাড়তি চেগে ওঠে। যেমন আমরা লাল–‌হলুদ জার্সিতে মোহনবাগানকে সামনে পেলে চার্জড হয়ে যেতাম। এবার আই লিগটা অল্পের জন্য হাতছাড়া হলেও মোহনবাগানের খেলায় একটা ধারাবাহিকতা ছিল। আর সেই ভাল খেলাটা ফেডারেশন কাপেও বজায় রয়েছে। নুন ছাড়া বিরিয়ানির যেমন বিস্বাদ, তেমন ফুটবলে গোল ছাড়া ভাল খেলার দাম নেই।
সঞ্জয়ের দল কিন্তু এখানেই এগিয়ে। ওর কোচিংয়ের একটা ইতিবাচক দিক আমার খুব ভাল লেগেছে। সেটা হল আক্রমণাত্মক ফুটবল। গোল খাওয়ার ভয়ে ও কখনও ওর ফুটবলারদের গুটিয়ে থাকতে বলেনি। বরং দেখেছি, এক গোল খেয়েও দু’‌তিন গোল দিয়ে ম্যাচ জিতছে বাগান। এটা সম্ভব হচ্ছে, ওদের ফরোয়ার্ড লাইনটা অসম্ভব স্ট্রং বলে। সামনে চারজন গোল করার লোক থাকলে যে কোনও দল অপনেন্টকে ঘোল খাইয়ে দেবে। সনি, ডাফি, কাৎসুমি, বলবন্ত তো আছেই, পরে নেমে জেজেও গোল পাচ্ছে। ফেড কাপ সেমিফাইনালে মোহনবাগানের থেকে ইস্টবেঙ্গল বেটার খেলেছে। কিন্তু লাভ কী, যদি গোল করতে না পারে। মোহনবাগানের সনি সেদিন দারুণ কিছু করেনি, তাতেও জয় আটকাল না ডাফি আর বলবন্ত হাফ চান্স থেকে গোল করে গেল বলে। ফেড কাপ ফাইনালে এই কারণেই বেঙ্গালুরুর থেকে এগিয়ে মোহনবাগান। বেঙ্গালুরুর বলে বলে গোল করার লোক তো নজরে আসছে না। একে তো ওদের খেলায় ধারাবাহিকতার প্রচণ্ড অভাব, ফেড কাপ ফাইনালে উঠেছে নজরকাড়া ফুটবল না খেলেই, তার ওপর যে ছেলেটা কিছুটা হলেও পার্থক্য গড়ে দিতে পারত, সেই সুনীল নেই চোটের জন্য। সুনীলের মধ্যে একটা লিডারশিপ কোয়ালিটি আছে। ওর অভাব বোধ করবে বেঙ্গালুরু। মাঝমাঠে আর একটা ছেলেকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে এর আগে খেলতে দেখেছিলাম। সে হল ইউজেনসন লিংডো। এবার কিন্তু বেশ নিষ্প্রভ। ওই জায়গায় মোহনবাগান মাঝমাঠে টেক্কা দিচ্ছে শেহনাজ, শৌভিক, কাৎসুমিরা। চার বছরের মধ্যে সেরা ফর্মে আছে কাৎসুমি। সবসময় দৌড়চ্ছে, আক্রমণকে সচল রাখছে।
আর একজনের কথা বলতেই হবে। ড্যারেল ডাফি। অসম্ভব ওয়ার্ক লোড নিচ্ছে। উঠে–‌নেমে খেলে দলকে সাহায্য করছে। বিদেশি হয়েও কাৎসুমি, ডাফি যেন ঘরের ছেলের মতো আন্তরিক, পরিশ্রমী খেলায়। মোহনবাগান এই কারণে একটা দল হতে পেরেছে। গোলে দেবজিতের থাকাটা একটা বড় প্লাস পয়েন্ট বাগানের। সারা ম্যাচে ডিফেন্সের ভুল হবে না এমন তো হতে পারে না। হলে বিশ্বস্ত দুটো হাত দিয়ে পরিত্রাতার ভূমিকায় গোলের নিচে দলকে বাঁচাচ্ছে দেবজিৎ। এতে গোটা দলের কনফিডেন্স লেভেলটা অনেক হাই। সবদিক বিবেচনা করেই মোহনবাগানকে ফাইনালে এগিয়ে রাখছি। যদি না জেতে সেটা হবে অঘটন। তখন বলতেই হবে কপাল মন্দ। চ্যাম্পিয়নস লাক বাগানের সঙ্গে ছিল না। ‌‌‌

No comments:

Post a Comment

Pages