এ যেন নববর্ষে নতুন করে শুরু করা। শনিবার লাল– হলুদের সকালটা যেন এক অন্য দিন। ভিড় এদিনও ছিল ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। তবে তা বিক্ষোভ দেখাতে নয়। বরং বর্ষবরণের উৎসবে মেতে উঠতে। লাল–হলুদ তাঁবুর সুসজ্জিত তোরণ পেরিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়েছে সদস্য সমর্থকদের হাসিভরা মুখ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কিছু সময়ের জন্য হলেও সব বেদনা ভুলেছিলেন সদস্য–সমর্থক–কর্তারা।
লাল–হলুদ শাড়িতে সপরিবারে হাজির অতি বড় ভক্ত লজেন্স বিক্রেতা যুমনা মাসি। গরমের হাত থেকে বাঁচাতে কর্তারা রেখেছিলেন ঢালাও ঠান্ডা শরবতের ব্যবস্থা। তাঁবুর পরিবেশটাও যে একেবারে শান্ত, শীতল। কে বলবে, আগের দিন সকালে এই ইস্টবেঙ্গল তাঁবু উত্তাল হয়েছিল সমর্থকদের বিক্ষোভে। কোচ–ফুটবলাররা ইস্টবেঙ্গল জনতার হাতে চরম হেনস্থা হন। তাতেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় রবিবারের ডিএসকে শিবাজিয়ান্স ম্যাচের প্রস্তুতি সারতে ইস্টবেঙ্গল মাঠে আসা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল কোচ মর্গানের মনে। কর্তারা নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করার পরই শনিবার সকালে দল নিয়ে অনুশীলন নামেন মর্গান। বিক্ষোভের ক্ষতয় মলম লাগাতে কর্তারা এদিন অভিনব এক উদ্যোগ নেন সিনিয়র দল অনুশীলনে নামার মুহূর্তে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবল স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ফুলের তোড়া উপহার দেন মর্গান ও তাঁর ফুটবলারদের। এতে আগের দিনের আতঙ্ক হয়ত ঘুচেছে ফুটবলারদের, কিন্তু বিক্ষোভকারীদের হাতে হেনস্থার গ্লানি কতটা মিটেছে, সেটা বোঝা যাবে রবিবার বারাসত স্টেডিয়ামে ডিএসকে শিবাজিয়ান্সের বিরুদ্ধে ফুটবলারদের খেলায়। নির্বিঘ্নেই অনুশীলন সেরে সাজঘরে ফেরেন তাঁরা। গতকাল জনতা ছিল মারমুখী, এদিন অবশ্য অনেক সমর্থককে দেখা গেল প্লাজা, জ্যাকিচাঁদ, ওয়েডসনদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। এঁদের কথা ভেবেই ডিএসকে ম্যাচে সেরা দিতে নামবেন এমন আশা করাই যায়। তবে তিনি ও তাঁর ফুটবলাররা যে গতদিনের ঘটনার পর বেশ চাপে আছেন, সেটা বোঝা গেছে মর্গানের চোখমুখ দেখে। কথাতেও সেটা বেশ ধরা পড়েছে। সম্ভবত এটা বুঝেই সাজঘরে এদিন শ্যাম থাপা ও কাজল ঢালিকে নিয়ে যান কর্তা দেবব্রত সরকার পেপ টক দিতে। দুজনেই ফুটবলারদের বলেন, তাঁদের সময় এর থেকেও বেশি বিক্ষোভ হত। আর সেটা এরকম একদিন নয়, বারবার। সমর্থকদের মারের ভয়ে তাঁবু ছেড়ে বেরতেই পারতেন না তাঁরা। আবার এই সমর্থকরাই বুকে টেনে নিতেন, মাথায় তুলে নামতেন, পরে সাফল্য আনলে। তাই এই মারমুখী মেজাজকে মাথায় না রেখে আই লিগের বাকি তিন ম্যাচে সেরা দিতে হবে ফুটবলারদের, সমর্থকদের মন পেতে। দেবব্রত সরকারও বলেন, সব ভুলে গিয়ে ডিএসকে ম্যাচ মন দিতে। এতে ফুটবলাররা কতটা উজ্জীবিত হলেন সেটা সময়ই বলবে। তবে অনুশীলনে ফুটবলাররা ছিলেন স্বাভাবিক ছন্দেই। ডিসিপ্লিনারি গ্রাউন্ডে গোলকিপার রেহনেশকে বাড়ি পাঠিয়েছে ক্লাব। কার্ড সমস্যায় প্লাজা নেই। পেটের গন্ডগোলে মেহতাব গত দুদিন অনুশীলন করেননি। এদিন অবশ্য মাঠে এসে আলাদাভাবে অনুশীলন সারেন তিনি। কোচ মর্গান অবশ্য জানালেন, ডিএসকে ম্যাচে তিনি মেহতাবকে ধরেই এগোচ্ছেন। ডিএসকে ম্যাচে দলে বেশ কিছু বদল হতে পারে সে ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন মর্গান। সহকারী হ্যাকেটকে সরিয়েছে ক্লাব, গোলকিপার কোচ অভিজিৎ মণ্ডলকেও সরানোর পথে, সব মিলিয়ে মর্গানের পক্ষে পরিস্থিতিটা খুব অনুকূল নয়। গতকালের ঘটনা যে তাঁকে বেশ দাগা দিয়ে গেছে, সেটা বলেই ফেললেন কথায় কথায়। প্রশ্ন ছিল, সমর্থকদের বিক্ষোভ ডিএসকে ম্যাচে খেলায় প্রভাব পড়বে কিনা? পাশে বসা ওয়েডসনকে দেখিয়ে মর্গানের প্রতিক্রিয়া, ‘এটা ভাল বলতে পারবে ওয়েডসনরাই। কারণ ওরা মাঠে নেমে খেলবে। তবে গতকাল যেটা হয়েছে সেটা বাড়াবাড়ি। শুরুতে একদল সমর্থক এসে আমার সঙ্গে খুব ভালভাবেই কথা বলছিল। ওদের নানা ক্ষোভ নিয়ে। কিন্তু পরে একদল সমর্থক এসে যেটা করে সেটা একেবারেই সমর্থন যোগ্য নয়। বিক্ষোভ দেখানোয় কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু থুতু ছেটানো মানা যায় না। পরিস্থিতিটা খুব কঠিন। তার মধ্যেই সেরা দিতে হবে ফুটবলারদের। একটা চাপ তো থাকবেই। আইজল বা অন্যরা কী করল ভাবলে চলবে না, নিজেদের কাজটা করতে হবে।’ ওয়েডসন অবশ্য বলেন, ‘আমার কোনও চাপ নেই। তাছাড়া বাকি তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্টের লক্ষ্যেই নামব।’ প্রতিপক্ষ ডিএসকে শিবাজিয়ানস কোচ ডেভ রজার্স গুরুত্ব দিলেন না ইস্টবেঙ্গলে বিক্ষোভের। বরং চাপে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে তাঁর গলায় সমীহর সুর। বলেন, ‘আমার খেলোয়াড় জীবনেও এই ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। আমার পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটা আশ্চর্যের নয়। তার জন্য আমরা তৈরি। ওদের যেমন প্লাজা থাকবে না, তেমন আমার নেই কিম। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন। জিততে ১০০ শতাংশ দিতে হবে।’বাড়াবাড়ি, থুতু ছেটানো মানা যায় না: মর্গান - মুনাল চট্টোপাধ্যায় | আজকাল
Share This
Tags
# ইষ্ট বেঙ্গল
# ফুটবল
Share This
About Web Master
ফুটবল
Labels:
ইষ্ট বেঙ্গল,
ফুটবল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment