দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকা এখন ওঁদের পছন্দ নয়। লক্ষ্য এখন, ‘মা’ পেরনো সল্টলেক, নিউ টাউনের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট। ময়দান কত দূর, সেটা, এই মুহূর্তে বিচার্য নয় ওঁদের কাছে। লক্ষ্য একটাই, নিজেকে সুস্থ রাখার কারণে, আরও ভাল থাকার জন্য চাই অত্যাধুনিক সুযোগ–সুবিধা। এবং এ জন্যই পাল্টে গেছে ওঁদের পছন্দের তালিকা।
সাউথ সিটি এখন আর বড় কোনও হাতছানি নয় ওঁদের চাহিদার কাছে।
তাহলে চাহিদাটা কী?
চাহিদা জানার আগে অবতারণা করা দরকার কাদের কথা বলা হচ্ছে? বছর চার–পঁাচ আগেও দুই প্রধানে খেলা বিদেশি কোচ–ফুটবলারদের আস্তানা বলতে ছিল একটাই— প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের সাউথ সিটি। ওডাফা ওকোলি, টোলগে ওজবে, উগা ওপারা থেকে বাগানের প্রাক্তন কোচ করিম বেঞ্চারিফারা থাকতেন ওখানে।
সময়ের সঙ্গে সেই ‘ট্রেন্ড’ বদলেছে। এখন মোহনবাগান–ইস্টবেঙ্গলের কোনও বিদেশিই আর সাউথ সিটিতে থাকতে চাইছেন না। আনোয়ার শাহ রোডের ঘিঞ্জি এলাকা নয়, নিউ টাউনের মুক্ত বাতাসে নিজেদের সতেজ রাখতে চাইছেন। মনঃসংযোগের প্রয়োজনে পাচ্ছেন নিরিবিলি পরিবেশ।
এবার এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, দুই বড় ক্লাবে খেলা বিদেশিরা চলতি মরশুমে কে কোথায় থাকেন? মোহনবাগানের সনি নর্ডি ও ড্যারেল ডাফির ঠিকানা নিউ টাউনের ‘ইউনি ওয়ার্ল্ড সিটি’। ঝাঁ চকচকে। ভিতরে ঢুকলে দেখা যায়, বিল্ডিংগুলি যেন আকাশ ছঁুয়ে রয়েছে। বাগান সচিব অঞ্জন মিত্রও ওখানেই থাকেন। সবুজ–মেরুন অধিনায়ক কাৎসুমি ইউসা গত মরশুমে সাউথ সিটিতে থাকলেও এখন ঠিকানা বদলে চলে গেছেন সল্টলেকের এক ফ্ল্যাটে। ডিফেন্ডার এডুয়ার্ডো আবার থাকেন নিউ টাউনের ‘নভোটেল’ হোটেল লাগোয়া এক ফ্ল্যাটে। এ প্রসঙ্গে সনিকে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, ‘গত বছর আমি সল্টলেক স্টেডিয়ামের কাছে একটি ফ্ল্যাটে (নাম মণিকিরণ) ছিলাম। এবার নিউ টাউনে চলে গেছি। আগেরটার থেকে এটা বেশি পছন্দের।’ ডাফি মজা করে বললেন, ‘ওখানে থাকাই ভাল। তাহলে আর আপনারা (সাংবাদিকের উদ্দেশে) বিরক্ত করতে পারবেন না।’ একটু থেমে জুড়লেন, ‘দারুণ জায়গা। ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে নানা জায়গা ঘুরে বেড়াতেও সুবিধে।’
বাগান বিদেশিরা নিউটাউন, সল্টলেক হলে ইস্টবেঙ্গলের কোচ ট্রেভর মর্গান থেকে দুই বিদেশি— উইলিস প্লাজা ও ইভান বুকেনিয়ারা থাকেন বাইপাসের ধারের ‘স্প্রিং ক্লাব’–এ। সল্টলেকের ফ্ল্যাটে থাকেন ওয়েডসন আনসেলমে এবং ক্রিস পেইন। এখন দুই প্রধানের কর্তারাও বিদেশিদের সাউথ সিটির মোহ দেখান না। তবে এতে তঁাদের খরচ কমেনি, বইকি বেড়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘সাউথ সিটিতে রাখার যা খরচ, নিউ টাউন কিংবা সল্টলেকের ফ্ল্যাটের ভাড়া মোটেই কম কিছু নয়।’ জানা গেল, আইএসএল খেলার সুবাদে বিদেশিরা এখন আগের তুলনায় আরও বেশি ঝাঁ–চকচকে ফ্ল্যাটের দাবি করছেন।
বিদেশিদের পছন্দ বদলের আরও একটা কারণ হল, যুবভারতী স্টেডিয়াম লাগোয়া হায়াত হোটেল। ফুটবলারদের অত্যাধুনিক জিম, স্টিম বাথের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। বাগানের কাৎসুমি প্র্যাকটিসে ছুটি থাকলেই ‘হায়াতে’ ছোটেন। বাকি বিদেশিরাও যান মাঝে মধ্যে। নিউ টাউন বা সল্টলেকে থাকলে হায়াতের দূরত্ব অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি সল্টলেক, নিউ টাউনে এখন শপিং মল গড়ে ওঠেছে। পার্ক সার্কাসের ‘কোয়েস্ট মল’ তো নর্ডির সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। ছুটি পেলেই যান সেখানে। কলকাতায় এসে বাগানের এডু–র পছন্দের জায়গা নিউ টাউনের ‘ইকো পার্ক’। বেশ কয়েকবার ঘুরতেও গেছেন ওখানে।
সব মিলিয়ে বলাই যায়, দুই বড় ক্লাবের বিদেশিদের স্বাদ বদল হয়েছে।
No comments:
Post a Comment